বিদেশ ডেস্ক ॥ চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গোপন সামরিক স্থাপনায় সুপারকম্পিউটারের সাহায্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্রের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের কাজ করা হয়। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা ও পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ স্থাপনা থেকেই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের যেসব হিসাব-নিকাশ করা হয়, তা হয়তো একদিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে। এখানকার ওই সুপারকম্পিউটারের চিপ তৈরি করেছে ফাইটিয়াম টেকনোলজি নামের চীনা একটি প্রতিষ্ঠান। তবে তারা চিপ তৈরিতে ব্যবহার করেছে মার্কিন সফটওয়্যার। আবার চিপটি তৈরি হয়েছে তাইওয়ানে অবস্থিত অত্যাধুনিক একটি চিপের কারখানায়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার ব্যবহার করেই এগিয়ে চলেছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ফাইটিয়াম মূলত বাণিজ্যিক চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অধিক পরিচিত। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন চিপ নির্মাতা ইনটেলের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। তবে, পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা মনে করেন, প্রতিষ্ঠানটির পেছনে রয়েছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। কিন্তু তাঁদের গবেষণা শাখার সঙ্গে পিএলএর যোগসূত্র থাকার বিষয়টি কখনোই সামনে আনে না। হাইপারসনিক সমরাস্ত্র নিয়ে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগের বিষয়টি পেন্টাগনের জন্য এখন বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, চীনের দ্রুতগতির বা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার স্থাপনাটি চায়না অ্যারো ডায়নামিকস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে (সিএআরডিসি) অবস্থিত। এর সঙ্গেও পিপলস লিবারেশন আর্মির যোগসূত্র রয়েছে। তবে তা পরিষ্কার নয়। তবে বিশ্লেষকেরা ধারণা করেন, এটি পরিচালনায় রয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন মেজর জেনারেল। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় বিশ্লেষকেদের কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। চীন যেভাবে বেসামরিক প্রযুক্তিকে সামরিক কাজে লাগায়, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ফাইটিয়ামের সঙ্গে সিএআরডিসির অংশীদারত্বের বিষয়টি। তাদের উন্নয়নের অধিকাংশই মার্কিন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে এ ধরনের বাণিজ্য অবৈধ নয়। বৈশ্বিক আধুনিক প্রযুক্তির সরবরাহব্যবস্থার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। কারণ, এ ধরনের চিপসেট বাণিজ্যিক ডেটা সেন্টার তৈরিতেও কাজে লাগানো যায়, আবার তা সামরিক সুপারকম্পিউটারেও কাজে লাগানো হতে পারে। হাইপারসনিক বিষয়টি আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। এ প্রযুক্তিতে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়েও পাঁচ গুণ গতিতে ছুটতে পারে এবং বর্তমান যেকোনো প্রতিরক্ষা ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন ফাইটিয়ামসহ কয়েকটি চীনা কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় ছিল। কিন্তু তাদের সময় শেষ হয়ে যায়। এ ধরনের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারলে মার্কিন কোনো প্রযুক্তি চীনের প্রতিষ্ঠানের হস্তগত হতো না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে চীনের উন্নত হাইপারসনিক সমরাস্ত্র কর্মসূচির গতি কমে যেত। এতে অন্যান্য গোপন অস্ত্র ও শক্তিশালী নজরদারি সক্ষমতা তৈরির বিষয়টিতেও চীন বেশি দূর এগোতে পারত না। মার্কিন কোম্পানিগুলোর যুক্তি হচ্ছে, তাদের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিলে তাতে মুনাফা কমে যায়। এতে চীন অন্যত্র ব্যবসা খুঁজতে উৎসাহী হয় এবং নিজস্ব শিল্প গড়ে তোলার পথে হাঁটতে শুরু করে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালা হচ্ছে তাদের প্রযুক্তি চীনা সেনাবাহিনী যাতে কাজে লাগাতে না পারে। পিপলস লিবারেশন আর্মির ভবিষ্যৎ অগ্রগতি ঠেকানোর বিষয়টি ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানায়, ফাইটিয়ামের এগিয়ে চলার বিষয়টি তাইওয়ানকে উভয়সংকটে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন নিয়ে দোটানায় রয়েছে তাইওয়ান। বেইজিংয়ের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য তারা ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বেইজিংয়ের দিক থেকে তাইওয়ানের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। তবে অন্যদিকে, তাইওয়ানের কোম্পানিগুলোকে ব্যবসার জন্য চীনা বাজারের দিকেই তাকাতে হয়। তাইওয়ানের বাণিজ্যের ৩৫ শতাংশই চীন-নির্ভর। এখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
Leave a Reply